অযোধ্যা মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু, উৎসর্গ মৌলভী শাহের নামে

ভারতের উত্তর প্রদেশের আযোধ্যায় প্রস্তাবিত ‘মসজিদ-প্রকল্প’র নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। দেশটির ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বাবরি মসজিদের পরিবর্তে মসজিদ প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ধন্নিপুর গ্রামে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের সূচনা হয়। ওই সময় দ্য ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশনের (আইআইসিএফ) সভাপতি জুফার আহমদ ফারুকী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর কমপ্লেক্সের ট্রাস্টের সব সদস্য বৃক্ষরোপণ করেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটা জানা গেছে।
নির্মাণকাজ প্রসঙ্গে আইআইসিএফ প্রধান জাফর আহমদ ফারুকি বলেন, ‘আমরা নির্ধারিত জমির মাটি নিরীক্ষা শুরু করেছি। তাই বলা যেতে পারে, মসজিদের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়েছে।
মসজিদ কমপ্লেক্সটি ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতাযুদ্ধের নায়ক আহমদুল্লাহ শাহের নামে উৎসর্গ হবে। ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশনের সূত্রে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আইআইসিএফের সেক্রেটারি আতহার হুসাইন এই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘মসজিদ কমপ্লেক্সটি সামাজিক ভ্রাতৃত্বের প্রতীক হয়ে থাকবে। তাই এটি আহমদুল্লাহ শাহকে উৎসর্গ করা হবে। কারণ, তিনি ভারতীয় ভ্রাতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এবং ইসলামের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন।
মৌলভী আহমদুল্লাহ শাহ ফয়জাবাদি
ইংরেজবিরোধী প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতা। ধারণা করা হয়, তিনি আনুমানিক ১৭৮৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৫৮ সালের ৫ জুন তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে যুদ্ধে শহীদ হন।
১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ নিয়ে লেখা ব্রিটিশ অফিসার কোলোনেল জর্জ ব্রুস ম্যালেসন রচিত ‘হিস্টোরি অব ইন্ডিয়ান মিউটিনি’ বইয়ে মৌলভী শাহের সশস্ত্র ও সংগঠিত বিদ্রোহের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মৌলভী আহমদুল্লাহ ভারতের আওয়াদ অঞ্চলে বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন। ফয়জাবাদের চক এলাকায় তিনি একটি মসজিদও প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্রোহী নেতাদের সঙ্গে পরামর্শের জন্য তিনি সেখানে সমবেত হতেন। আওয়াদের বিশাল অংশ ও ফয়জাবাদ এলাকা তিনি ইংরেজমুক্ত করেছিলেন।
পেছনের কথা
গত ১৯ ডিসেম্বর অনেক কিছুর পর বিতর্কিত শহর অযোধ্য থেকে ২৫ কি.মি. দূরে প্রস্তাবিত মসজিদের নকশা ও নির্মাণ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। পরিকল্পনাধীন মসজিদটি নির্মাণে ভারতের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ‘আইআইসিএফ’ প্রতিষ্ঠা করে।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদটি উগ্র হিন্দুরা ভেঙে ফেলে। এর প্রায় ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বাবরি মসজিদ মামলার রায় দেয়। রায়ে অযোধ্যার বিতর্কিত স্থানে রামমন্দির নির্মাণের আদেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি অযোধ্যাতেই বিকল্প স্থানে মুসলমানদের জন্য মসজিদ নির্মাণের জন্য ৫ একর জমি দেওয়ার এবং ট্রাস্ট গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রকল্পের আওতায় একটি মসজিদ, একটি হাসপাতাল, একটি জাদুঘর, একটি গ্রন্থাগার, একটি কমিউনিটি রান্নাঘর, ইন্দো-ইসলামিক সাংস্কৃতিক গবেষণা কেন্দ্র ও একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত থাকবে।