কোভিড ভ্যাক্সিন : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শিশুরা করোনার টিকা পাবে কী?

খুব শিগগিরই ১৮ বছরের কম বয়সিদের করোনার টিকা প্রদান শুরু হবে। তবে কোন টিকা দেওয়া হবে, তা এখনও ঠিক করতে পারেনি সরকার। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু হবে।
শিশুদের করোনার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) বলেছে যে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশু এবং কিশোর-কিশোরীরা কোভিডে আক্রান্ত হয় কম। তাই যদি তারা গুরুতর সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা একটি গোষ্ঠীর অংশ না হয়, তবে তাদের টিকাকরণ খুব জরুরি নয়। সে যাই হোক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইসরি গ্রুপ অফ এক্সপার্টস ফাইজার-বায়োনটেকের (Pfizer/BionTech) টিকা ১২ বছর বা তার বেশি বয়সিদের ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। গ্লোবাল হেলথ এজেন্সি বলছে যে ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সি, যারা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের টিকা অন্যদের সঙ্গেই দেওয়া যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমানে শিশুদের জন্য টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। তাই পরিস্থিতি যেরকম দাঁড়াবে সেই অনুযায়ী সুপারিশে পরিবর্তন আনা হবে। টিকাকরণে পিছিয়ে থাকা দেশগুলি আগে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যাকে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিক। তার পর অন্যদের দেওয়ার বিষয়ে ভাববে। অনেক দেশ রয়েছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ উন্নত দেশ, হয় তারা ১৮ বছরের কম বয়সিদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে, না হয় ইতিমধ্যেই টিকাকরণ শুরু করে দিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য দফতর ১২-১৫ বছর বয়সি সকলের জন্য ফাইজারের এক ডোজ কোভিড ভ্যাক্সিন দেওয়াতে অনুমোদন দিয়েছে। শিশুদের কোভিড টিকা দেওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ হল স্কুল বন্ধ থাকা। এতে করে শিশুদের পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে। অনলাইনে পড়াশোনা এখনও অধিকাংশ শিশু ও কিশোরী-কিশোরী রপ্ত করতে পারেনি। তাই ১৮ বছরের কম বয়সিদের টিকা দেওয়া হয়ে গেলে স্কুল খোলা যেতে পারে। বিবিসি বলছে, যে শিশুদের জন্য টিকা দেওয়ার কারণ হচ্ছে সংক্রমণের হার কমানো, এটা স্কুলে কোভিডের বিস্তার বন্ধ করবে বলে বিবেচনা করা হয় না। তাই প্রাপ্তবয়স্কদের মতো শিশুদের টিকাকরণকেও গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।
শিশুদের করোনার টিকা দিচ্ছে কোন দেশ?
মার্কিন সরকার ৫-১১ বছর বয়সি শিশুদের কোভিড ভ্যাক্সিন দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতিমধ্যেই ফাইজার-বায়োএনটেকের (Pfizer-BioNTech) ১২-১৫ বছর বয়সিদের টিকার জরুরি অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। উপসর্গযুক্ত সংক্রমণ রোধ করতে এই টিকার ডোজ ৯১ শতাংশ কার্যকরী বলে দাবি করেছে ফাইজার-বায়োএনটেক। এই টিকার ১০ মাইক্রোগ্রামের দু’টি ডোজ শিশুদের উপর পরীক্ষা করা হয়েছে। ১২ বছর বা তার বেশি বয়সের ক্ষেত্রে ৩০ মাইক্রোগ্রাম ডোজ ব্যবহার করা হয়।
ইউরোপের অনেক দেশ শিশুদের জন্য কোভিড ভ্যাক্সিন দেওয়া শুরু করেছে বা পরিকল্পনা তৈরি করছে। ফ্রান্স (France) ১২ বছর বা তার বেশি বয়সীদের টিকা দিচ্ছে, যদি তাদের বাবা-মায়ের সম্মতি থাকে। জার্মানি অগাস্ট মাসে ১২-১৭ বছর বয়সিদের টিকা দেওয়ার জন্য সম্মত হয়েছিল।
কিউবা ২ বছরের বেশি বয়সি শিশুদের জন্য টিকা চালু করেছে। চিনও ৩-১৭ বছর বয়সিদের সিনোভাক টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বাচ্চাদের এক ডোজ কোভিড ভ্যাক্সিন অথবা পরিমাণে কম ডোজের প্রয়োজন হতে পারে। কোভ্যাক্সিন টিকা শিশুদের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ব্যবহারের পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের মতো বাচ্চাদেরও কোভিডের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করতে দুই ডোজ টিকার প্রয়োজন হবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে এগুলো প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই। এর মধ্যে রয়েছে ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা, মাথাব্যথা, পেশি বা জয়েন্টে ব্যথা, জ্বর এবং ঠান্ডা লাগা।
কোভ্যাক্সিন অন্যান্য টিকার তুলনায় কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বাচ্চাদের উপর ক্লিনিকাল ট্রায়ালে রেকর্ড করা সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে রয়েছে ফ্লু-র মতো উপসর্গ। যেহেতু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়, তাই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যা প্রত্যাশিত। তার মধ্যে রয়েছে জ্বর, ইনজেকশন দেওয়ার জায়গায় ব্যথা ও লাল হয়ে যাওয়া, ঘুমঘুম ভাব, শরীরে ব্যথা এবং ক্লান্তি। এখনও পর্যন্ত কোভ্যাক্সিনের বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিছু রেকর্ড করা হয়নি। তবে একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হবে। যে বাচ্চাদের শারীরিক অসুস্থতা আছে তাদের ক্ষেত্রে আরও যত্নের প্রয়োজন হতে পারে। নিউজ১৮ থেকে।

