ফজরের নামাজের পর আমল

ফজরের নামাজের পর আমল: প্রিয় বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভাল আছেন । আজকের আলোচনার বিষয়টি হচ্ছে ফজরের নামাজের পর আমল আশা করি এই পোস্টের মাধ্যমে আপনার উক্ত বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন, তাই মনোযোগ দিয়ে পুরো লেখাটি পড়ুন!

ফজরের নামাজের পর আমল

ফজর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নামাজ। অন্য চার ওয়াক্তের চেয়ে ফজরের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত বেশি। ফজরের নামাজের সওয়াব ও ফজিলত নিয়ে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও ফজরের পর পড়ার মতো ফজিলতপূর্ণ অনেক আমল রয়েছে। যেগুলো পড়ে মুমিন বান্দা নানাবিধ উপকার লাভ করতে পারে।

ফজরের নামাজের পর আমল সমূহ

ফজরের পর পড়ার মতো ফজিলতপূর্ণ অনেক আমল রয়েছে। যেমন:

১)আয়াতুল কুরসি পাঠ করা: আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অন্তরায় থাকবে না।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ২৩৯৫)

২)আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের দোয়া: হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার নিম্নের দোয়া পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৯)
দোয়াটি হলো— رَضِيتُ باللهِ رَبَّاً، وَبِالْإِسْلَامِ دِيناً، وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيَّاً

উচ্চারণ : রাজিতু বিল্লাহি রব্বাওঁ ওয়াবিল ইসলামী দ্বিনাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা।
অর্থ : আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বিন হিসেবে ও মুহাম্মাদ (সা.)-কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।

আরও পড়ুন: জুমার দিনের ১১ টি আমল

৩)সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠ করা: আল্লাহর রাসুল (সা.) হাদিসে উল্লেখ করেছেন যে, ‘যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা নিম্নের ইস্তিগফারটি পড়ে এবং ওই দিনে বা রাতে ইন্তেকাল করে, তবে সে জান্নাতি হবে। (বুখারি, হাদিস : ৬৩০৬)

সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার- اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي، إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, খালাকতানি, ওয়া আনা আব্দুকা, ওয়া আনা আলা আহিদকা ওয়া ওয়া’দিকা মাস্তাতা’তু, আউজু বিকা মিন শাররি মা সানা’তু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগিফরুজ জুনুবা ইল্লা আন্তা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি আপনার গোলাম। আমি আপনার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির ওপর যথাসাধ্য আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আমার ওপর আপনার অনুগ্রহ স্বীকার করছি। আবার আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারবে না।

৪)জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া: হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের পর সাতবার নিম্নের দোয়াটি পাঠ করে এবং ওই দিনে বা রাতে তার মৃত্যু হয় তাহলে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৭৯)\

দোয়াটি হলো— اللهم أجرني من النار

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্ নার।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন।

৫)সুরা ইয়াসিন পড়া: হাদিসে সুরা ইয়াসিন পড়ার অনেক ফজিলত বর্ণিত আছে। প্রতিদিন সকালে আমরা সুরা ইয়াসিন পড়তে পারি।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার বলে, (সুব্‌হানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি) তার পাপসমূহ মুছে ফেলা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির সমান হয়ে থাকে।

ফজর নামাজের পর জিকির সমূহ

উম্মুল মুমিনিন হজরত জুওয়ায়রিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যূষে (ফজরের নামাজ শেষ করে) তাঁর কাছ থেকে বের হলেন। যখন তিনি ফজরের নামাজ আদায় করলেন তখন তিনি নামাজের জায়গায় ছিলেন।

এরপর তিনি দোহার পরে (সূর্য ওঠার বেশকিছু সময় পর) ফিরে এলেন। তখনও তিনি বসেছিলেন। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমি তোমাকে যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিলাম তুমি সেই অবস্থায়ই আছো?
তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
‘আমি তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর ৪টি কালেমা ৩বার পড়েছি। আজকে তুমি এ পর্যন্ত যা বলেছ; তার সঙ্গে ওজন করলে এই কালেমা চারটির ওজনই বেশি হবে। কালেমাগুলো এই-
سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، وَرِضَا نَفْسِهِ، وَزِنَةَ عَرْشِهِ، وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ
উচ্চারণ : সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি; ওয়া রিদাআ নাফসিহি; ওয়া যিনাতা আরশিহি; ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।’
অর্থ : ‘আল্লাহ পবিত্র আর প্রশংসাও তার; এ পবিত্রতা ও প্রশংসা তার সৃষ্ট বস্তুর সমান। তার নিজের সন্তুষ্টু সমান। (পবিত্রতা ও প্রশংসায় তিনি) তার আরশের ওজনের সমান। (পবিত্রতা ও প্রশংসায় তিনি) তার বাণীসমূহ লেখার কালির পরিমানের সমান।’ (মুসলিম)

ফজরের সুন্নত নামাজের পর আমল

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের সুন্নাত নামাজের কেরাতে দুইটি সুরা পড়তেন। এ দুই সুরায় ফজরের সুন্নাত নামাজ পড়াও সুন্নাত। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত নামাজে সুরা আল-কাফিরুন এবং ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ (সুরা ইখলাস) তেলাওয়াত করতেন।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)

আপনি যদি এ ধরনের তথ্যমূলক পোস্ট জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আপনার একটি মন্তব্য আমাদের অনেক উৎসাহ দেয়। আশা করি আপনারা আজকের পোস্ট: ফজরের নামাজের পর আমল পড়ে পুরো বিষয়টি জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ আমাদের ওয়েবসাইটি ভিজিট করার জন্য!