মাতাল হয়ে তালাক দিলে বিধান কী?
প্রশ্ন : এলাকার পরিচিত এক লোক প্রায় সময় মদ পান করে। গত কিছুদিন আগে রাতে সে মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরে। এরপর স্ত্রীকে খুব মারধর করে এবং বলে, ‘আজ থেকে তুই তালাক’। কিন্তু পরের দিন ঘুম থেকে ওঠার পর বেশি লজ্জিত হয়।
তার স্ত্রী কয়েকদিন ধরে তার থেকে আলাদা থাকছে। এখন তারা পুনরায় ঘর-সংসার করতে চাইলে করণীয় কী? জানার বিষয় হলো- এ অবস্থায় তার স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়েছে কিনা? তালাক হয়ে গেলে তারা ঘর-সংসার করতে পারবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : মদ্যপ্য অবস্থায় তালাক দিলে- তালাক পতিত হয়ে যায়। ফলে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্ত্রীর ওপর ওই ব্যক্তির এক তালাকে রজয়ি পতিত হয়েছে। তাই লোকটি পুনরায় ঘর-সংসার করতে চাইলে ইদ্দতের মধ্যে ‘রাজআত’ করতে হবে। তার মানে তিনি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবেন।
রাজআতের নিয়ম হলো- ইদ্দতের ভেতর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো। যেমন- একথা বলা যে, ‘তোমাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলাম’। একথার মাধ্যমে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পুনঃবহাল হয়ে যাবে।
আর যদি তিনি ইদ্দতের ভেতরে (ঋতুমতী নরীর জন্য তিনটি ঋতুস্রাব অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য সন্তান প্রসব পর্যন্ত) রাজআত না করেন, তবে ইদ্দত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ঘর-সংসার করতে চাইলে নতুন মোহর ধার্য করে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে নতুন করে বিয়ে করতে হবে।
স্মর্তব্য যে, এই স্ত্রীকে ইদ্দতের ভেতরে রাজআত করা হোক বা ইদ্দত শেষ হওয়ার পর পুনরায় বিয়ের মাধ্যমে স্ত্রীকে গ্রহণ করা হোক— উভয় ক্ষেত্রে লোকটি দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। তাই পরবর্তীতে কখনো তাকে দুই তালাক দিলে আগের এক তালাকের সঙ্গে মিলে তিন তালাক হয়ে যাবে। আর এতে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে নতুন করে বিয়ে করেও একত্রিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। তাই ভবিষ্যতে তালাকের ব্যাপারে খুবই সর্তক থাকতে হবে।
প্রসঙ্গত, শরিয়তে মদপান সম্পূর্ণ হারাম। মদের বিষয়ে কোরআনে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। হাদিসেও কঠিন হুঁশিয়ারি এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন মদ পান করে, তখন সে মুমিন অবস্থায় থাকে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৭৭২)
তথ্যসূত্র : শরহু মুখতাসারিত তাহাভি : ৫/১৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ১৮২৫৮; ফাতহুল কাদির : ৩/৩৪৫; বাদায়িউস সানায়ি : ৩/১৫৮; তাবয়িনুল হাকায়েক : ৩/৩৪; আলবাহরুর রায়েক : ৩/২৪৭