যেসব নিয়ম মেনে চললে হার্ট অ্যাটাক এড়ানো সম্ভব
হার্ট অ্যাটাক হলে সব সময় যে বেঁচে ফেরার সৌভাগ্য হয়, তা কিন্তু নয়। বরং হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেলে খুব বেশি সময়ও পাওয়া যায় না চিকিৎসার জন্য। একটু দেরি করলেই ঘটতে পারে মৃত্যু। আধুনিক এই সময়ে আমাদের আধুনিক জীবনযাপন অনেক বেশি সুবিধা যেমন দিয়েছে, তেমনই ডেকে এনেছে কিছু অসুখকেও। হার্টের রোগীর সংখ্যার দ্রুত বেড়ে চলা কিন্তু সেদিকেই ইঙ্গিত করে।
বয়সে তরুণ এমন অনেকের ক্ষেত্রেও হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক। শরীরচর্চা কিংবা পরিশ্রম না করা, খাবারে অনিয়ম, ধূমপান, মানসিক চাপ ইত্যাদি হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের বড় কারণ। হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা অহরহ ঘটলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকে না বা চোখ এড়িয়ে যায়।
চিকিৎসকেরা বলছেন, লক্ষণগুলো জানা থাকলে হার্ট অ্যাটাক থেকে দূরে থাকা সম্ভব। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, হার্টের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা না থাকলে মৃত্যু যেমন ঘটতে পারে, তেমন বেঁচে থাকলেও হার্টে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ
* বুকে চাপ চাপ ব্যথা,
* বুকের এক পাশে বা পুরো বুক জুড়ে ভারী ব্যথা,
* বুক থেকে হাতে ব্যথা হতে পারে
* সাধারণত বাম হাতে ব্যথা হয়, কিন্তু দুই হাতেই ব্যথা হতে পারে।
* শরীরের অন্য অংশে ব্যথা,
* মনে হতে পারে ব্যথা শরীর এক অংশ থেকে অন্য অংশে চলে যাচ্ছে,
* নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা,
* বমি ভাব হওয়া,
* মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম করা,
* ঘাম হওয়া,
* বুক ধড়ফড় করা বা বিনা কারণে অস্থির লাগা,
* সর্দি বা কাশি হওয়া।
কখন হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দেয়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা, বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া কিংবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের মাসখানেক ঘটে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হয় কিন্তু শরীরের অন্য অংশে ব্যথা টের পান না অনেকে। যারা বয়স্ক কিংবা ডায়াবেটিসের রোগী তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা অনুভব করেন না।
হার্ট অ্যাটাক কেন হয়?
ধমনী থেকে হৃদযন্ত্রে আসে আমাদের হৃদপিণ্ডে প্রবাহিত রক্ত। এই প্রবাহের পথ সরু হয়ে গেলে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে নালীর ভেতরে। ফলস্বরূপ হৃদপিণ্ডে বন্ধ হয়ে যেতে পারে রক্তপ্রবাহ। এমন হলে হৃদযন্ত্রের পেশীগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে সে আর অক্সিজেন প্রবাহিত করতে পারে না। যখন হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে অক্সিজেন প্রবাহ বন্ধ হয়, তখনই হয় হার্ট অ্যাটাক।
হার্ট অ্যাটাক হলে কী করবেন?
হার্ট অ্যাটাক হলে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। চিকিৎসা পেতে একঘণ্টা দেরি হলে মৃত্যুর হার বেড়ে যায় প্রায় দশ শতাংশ। এমনটাই জানাচ্ছে ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন। জেনে নিন হার্ট অ্যাটাক হলে সঙ্গে কোন কাজগুলো করতে হবে-
* যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীকে হাত-পা ছড়িয়ে শক্ত জায়গায় শুইয়ে দিতে হবে। পোশাক ঢিলে করে দিতে হবে।
* আক্রান্ত ব্যক্তির নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার চেষ্টা করতে হবে।
* আক্রান্ত ব্যক্তির বমি এলে তাকে একদিকে কাত করে দিতে হবে। এতে তার বমি করা সহজ হবে। ফলে ফুসফুসে বমি ঢুকে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
হার্ট অ্যাটাক ঠেকাতে যা করবেন
* হার্ট অ্যাটাক এড়াতে সবার আগে পরিবর্তন আনতে হবে জীবনযাপনের ধরনে। অস্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দিয়ে খেতে হবে স্বাস্থ্যকর সব খাবার। শরীরচর্চা, হাঁটা ইত্যাদির অভ্যাস করতে হবে। শারীরিকভাবে সব সময় সক্রিয় থাকতে হবে। খাওয়া, ঘুম- সবকিছু যেন নির্দিষ্ট ছন্দে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
* নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো মারাত্মক অসুখ। সবসময় দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। বাদ দিতে হবে ধূমপানের মতো বদ অভ্যাস। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।