ঘুরে আসুন

থাইল্যান্ড ভ্রমণ তালিকায় ৭ গন্তব্য (দ্বিতীয় পর্ব)

থাইল্যান্ডের বৈচিত্র্য তুলে ধরতে প্রথম পর্বে বলেছিলাম দেশটির বৈচিত্র্যময় সাতটি অঞ্চলের কথা। এই পর্বে থাকছে আরও সাতটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গা।

এখানো আপনার মনের মত জায়গা খুঁজে না পেয়ে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। এবার অবশ্যই আপনি বেছে নিতে পারবেন আপনার গন্তব্য।

১. পাতায়া
পাতায়াকে অনেকে পাপের শহর নামে ডেকে থাকেন। থাইল্যান্ডের যেসব জায়গার কথা আলাদা করে মনে করিয়ে দিতে হয় না সেগুলোর মধ্যে আরেক নাম পাতায়া। বেশির ভাগ পর্যটক পাতায়াকে প্রাপ্তবয়স্কদের ফুর্তির জায়গা হিসেবেই বিবেচনা করেন। তবে নারী সান্নিদ্ধ ও মদ্য পান ছাড়াও অনেক কিছুই করার রেয়েছে এখানে। এখানকার সমুদ্রসৈকত গুলো থাইল্যান্ডের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কম আকর্ষণীয় হলেও সূর্যাস্ত, সমুদ্র আর বালুকাবেলার সমন্বয়ে আপনার সময় একটুও খারাপ কাটবে না। স্নরকেলিং এর জন্য অদূরেই রয়েছে সুন্দর দ্বীপ। সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি “স্যাঙ্কচুয়ারি অব ট্রুথ” নিস্পলক তাকিয়ে থাকার মত সুন্দর একটি জায়গা। নানা রকম ফুলের গাছ, মূর্তি ও পানির ফোয়ারা ঘেরা নং নুচ ট্রপিকাল বোটানিক্যাল গার্ডেনটাও দেখার মত একটি পার্ক। এছাড়াও রয়েছে, মিনি সিয়াম, আর্ট ইন প্যারাডাইস, পাতায়া ভাসমান বাজার, ফ্লাইট অফ দ্যা গিবন, রিপ্লি’স বিলিভ ইট অর নট, ফ্রস্ট ম্যাজিকাল আইস অফ সিয়াম ইত্যাদি।

২. সুখোথাই
বিভিন্ন উপায়ে সংরক্ষিত ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষে পরিপূর্ণ থাইল্যান্ডের প্রাচীন রাজধানী সুখোথাই। পুরো শহর জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর দর্শনীয় স্থান গুলো। তাই কোন নির্দিষ্ট স্থানে অত্যাধিক মানুষের ভিড় চোখে পড়বে না আপনার। ভিড় ছাড়াই একদম নিজের মত করে উপভোগ করতে পারবেন। ক্ষয়প্রাপ্ত দেয়াল, বিশাল ভিত্তিপ্রস্তর, হৃদয়স্পর্শী প্যাগোডা, বিভিন্ন আকার ও ভঙ্গিমায় বুদ্ধের ছবি, সউচ্চ স্তম্ভ আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে শত শত বছর আগের পৃথিবীতে। পদ্ম ফুলে ভর্তি পুকুর নিঃসন্দেহে আপনার মন কাড়বে। আপনার ঘুরে দেখার তালিকায় লিখে নিতে পারেন ওয়াট ট্রাফাং এনগোয়েন, ওয়াট মাহাতাত, ওয়াট সি চুম, ওয়াট স্রা সি, ওয়াট সোরাসাক এই নাম গুলো। হাতে সময় থাকলে অবশ্যই সি সাটচানালাই ঐতিহাসিক উদ্যান ঘুরে দেখতে ভুলবেন না।

৩. কোহ সামুই
থাই উপসাগরীয় এই দ্বীপের কথা নতুন করে বলার কিছু হয়তো নেই। থাইল্যান্ডে ভ্রমণ করার কথা তুললেই এই নামটি সবার মুখে চলে আসে। পারিবারিক ভ্রমণ, সদ্য বিবাহিতদের মধুচন্দ্রিমা, বন্ধুদের সাথে ভ্রমণ কিংবা একা একা – সব ধরনের ভ্রমণের জন্যই উপযোগী কোহ সামুই। চাউওয়েং, লামাই, এবং ম্য নাম এর মত অসাধারণ সব সমুদ্রসৈকতে ঘেরা এই দ্বীপ। পাশেই রয়েছে পুরনো মাছ ধরার গ্রাম বোফুট। শপিং, খাওয়া দাওয়া, মদ্যপান ও ঘুমের জন্যও আয়োজনের যেন শেষ নেই কোহ সামুই-এ। মমি করা ভিক্ষুর মন্দির, মহিলা ও পুরুষের যৌন অঙ্গের মত দেখতে পাথরে নির্মিত স্থাপনা এখানকার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম। বিলাসী পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিলাসবহুল স্পা সেন্টার ও গলফ খেলার মাঠ।

৪. নখোন রচসিমা
উত্তর পূর্ব থাইল্যান্ডে একটি বড় প্রদেশ নখোন রচসিমা। এই এলাকার প্রধান আকর্ষণ হল ইউনেস্কো তালিকাভুক্ত খাও ইয়াই জাতীয় উদ্যান। বিশাল জলপ্রপাত এবং বহু প্রজাতির বন্যপ্রাণী দর্শন, নতুন থেকে শুরু করে অভিজ্ঞদের জন্য হাইকিং, আশ্চর্য রকমের মনোরম দৃশ্য, প্রশান্ত ক্যাম্পিং সাইট সবই মিলবে এখানে। এর জনপ্রিয়তার আরও একটি কারণ হল ব্যাংকক থেকে এখানে আসা খুব সহজ। বুক ভরে সুদ্ধ সতেজ বাতাসে শ্বাস নেয়ার জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা ওয়াং নাম খিয়াও। এই প্রদেশের খুন থট জেলায় রয়েছে বিখ্যাত ওয়াট বন রাই মন্দির। রঙিন এবং কাল্পনিক চিত্রকর্মে সাজানো এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল বিশাল হাতির অনুকরণে।

৫. কাঞ্চনাবুরি
থাইল্যান্ডের পশ্চিমে বার্মিজ সীমান্ত বরাবার অবস্থিত কাঞ্চনাবুরি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং যুদ্ধের ইতিহাসে সমৃদ্ধ থাইল্যান্ডের এই অঞ্চল। কুয়াই নদীর উপর ঐতিহাসিক সেতু দেখতে বহু পর্যটক আসেন কাঞ্চনাবুরিতে। এছাড়া রয়েছে ডেথ রেলওয়ে নামের পুরনো একটি রেলপথ। যার এই ভয়ংকর নামকরণের পেছনে রয়েছে মর্মান্তিক ইতিহাস। তৎকালীন সময়ে এই রেলপথ নির্মাণের সময় বহু মানুষ নিহত হন। এই এলাকার ইতিহাস সংরক্ষণে নির্মাণ করা হয় বিভিন্ন জাদুঘর। “সোমবার” যুদ্ধকালীন কবরস্থান, ইরাওয়ান জাতীয় উদ্যান, বহু স্তরের ইরাওয়ান জলপ্রপাত, প্রা থাট গুহা এখানকার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ছোট আকৃতির ঝর্ণার পাশে অবস্থিত সায় ইয়োক ন্যাশনাল পার্ক পিকনিক করার জন্য বেশ উপযোগী জায়গা। আপনি যদি কোলাহল থেকে একটু দূরে জনমানবহীন কোন জলপ্রপাত উপভোগ করতে চান তবে আপনার যেতে হবে হুয়ে মেই খামিন। থাইল্যান্ডের ভেতরেই আপনি যদি সম্পূর্ণ এক ভিন্ন জগত দেখতে চান তাহলে যেতে পারেন সঙ্খলাবুরি।

৬. সিমিলান দ্বীপপুঞ্জ
ফাং নাগা প্রদেশের উপকূলে আন্দামান সাগরের ঝকঝকে পানিতে ভাসছে সিমিলান দ্বীপপুঞ্জ। স্কুবা ডাইভিং এবং স্নরকেলিং এর জন্য থাইল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান সিমিলান দ্বীপপুঞ্জ। আকর্ষণীয় সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্য এবং সমুদ্রতলের সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই অঞ্চলের সমুদ্রগুলো। একদিনেই ঘুরে শেষ করা যায় এই এলাকা তবে যারা ডাইভিং ভালোবাসেন তারা এখানে বেশ কয়েকদিন সময় হাতে নিয়ে আসতে পারেন। মাছ শিকার করা, বৈচিত্র্যময় পাথর দেখা, শুভ্র বালির সৈকতে সূর্যস্নান করা আপনার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন মে মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এখানে পর্যটক আসা যাওয়া নিষিদ্ধ থাকে।

৭. কোহ চাং
ট্রাট উপকূলের মোটামুটি বেশ বড় একটি দ্বীপ কোহ চাং। সুন্দর একটি দ্বীপে আপনি যা যা আশা করেন তার সবই পাবেন এখানে। শুভ্র বালির সৈকত, শ্যামল বন, জলপ্রপাত, অসংখ্য বন্যপ্রাণী সব মিলিয়ে যেন একটা সম্পূর্ণ প্যাকেজ। এখানকার উল্লেখযোগ্য সৈকত গুলো হল হাট খলং ফ্রাউ, লোনলি বিচ, হুয়াইট স্যান্ড বিচ, কাই বেই বিচ। নৌকা ভ্রমণে যেতে পারেন পাশের কোহ কুট ও কোহ ম্যাক দ্বীপে। ঐতিহ্যবাহী থাই ম্যাসেজের চমৎকার ব্যবস্থাও থাকছে এখানে। এখানকার সামদ্রিক খাবার খুব তরতাজা ও সুস্বাদু। ব্যায়বহুল বাংলো থেকে শুরু করে স্বল্প খরচের আবসন ব্যবস্থা রয়েছে পর্যটকদের জন্য।

Related Articles

Back to top button